হুমায়ুন কবির, রাণীশংকৈল(ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধিঃঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় এ বছর ৬ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করেছেন কৃষকরা। গত বছর ৬ হাজার ৯ শত ৫০ হেক্টর সরিষার আবাদ হয়েছিল। গত বছরের তুলনায় এবার কিছুটা কম আবাদ হলেও গাছ পাত এবং ফুলের আকার অনুযায়ী বাপ্পার ফলনে দ্বিগুণ লাভের আশায় দিন গুনছেন কৃষকরা। দিগন্ত জোড়া মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ। মাঠের পর মাঠ শুধু হলুদের বিশাল গালিচা, যতো দূরে চোখ পড়ে শুধু হলুদ আর হলুদ। চির সবুজের বুকে যেন কাঁচা হলুদের বিশাল আলপনা। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত চারপাশ। ফুলে ফুলে মৌমাছিরা মধু আহরণে পার করছেন ব্যস্ত সময়। প্রকৃতিতে হলুদ বর্ণে শোভা পাচ্ছে বিস্তীর্ণ সরিষার মাঠ। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে ফুলের গন্ধের সুবাস। পরিবেশকে করে তুলেছে মোহনীয়। সেই মোহনীয় পরিবেশ ও হলদে আভার পরশ নিতে ক্ষেতে ছুটছেন প্রকৃতিপ্রেমী উৎসুক অনেকেই। সেইসাথে সরিষা ফুলের ছবি তুলতে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ। সরিষার বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকের চোখেমুখে দেখা যায় আনন্দের হাসির ঝিলিক। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় সরিষার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছেন কৃষকেরা। শুক্রবার (৩০) জানুয়ারি সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রায় প্রতিটি মাঠ জুড়ে সরিষার আবাদ, ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত ফসলের মাঠ। শীতের শিশির ভেজা সকালে কুয়াশার চাদরে ঘেরা বিস্তীর্ন প্রতিটি মাঠ যেন হলুদ বর্ণে ঘেরা এক স্বপ্নীল পৃথিবী। যেদিকে তাকাই শুধু সরিষা ফুলের হলুদ রঙের চোখ ধাঁধাঁলো বর্ণীল সমারোহ। মৌমাছির গুণগুণ শব্দে সরিষা ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহ আর প্রজাপতির এক ফুল থেকে আরেক ফুলে পদার্পণ এ অপরুপ প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই যেন মনোমুগ্ধকর এক মুহূর্ত। ভোরের বিন্দু বিন্দু শিশির আর সকালের মিষ্টি রোদ ছুঁয়ে যায় সেই ফুলগুলোকে। তাই তো ভালো ফলনের আশায় উপজেলার কৃষকেরা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কৃষকের পাশাপাশি বসে নেই কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাণীশংকৈল উপজেলার ১ টি পৌরসভাসহ ৮ টি ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষকেরা তাদের জমিতে উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪,বারি-১৭, বারি-১৮ ও বিনা সরিষা-৯ আবাদ করেছেন। এরমধ্যে উল্লেখ করার মতো সরিষা আবাদ করেছেন উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামের পয়গাম আলী ৪ একর, জওগাঁও গ্রামের আলমগীর ৩ একর,নেকমরদ ইউনিয়নের কুমোড়গঞ্জ এলাকার গোলাম রসুল ৩ একর, আবুল হোসেন ৪ একর,অনন্তপুর গ্রামের রবিউল মানিক ৫ একর, গোগর এলাকার নজরুল ইসলাম ৩ একর জমিতে বিভিন্ন উন্নত জাতের সরিষা আবাদ করা করেছেন। এ মৌসুমে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৫ শত ৬০ হেক্টর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরে সরিষার আবাদ করা হয়েছিল প্রায় একই হেক্টর জমিতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আশা করছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উপজেলায় এ মৌসুমে ১০০০০ থেকে ১২০০০ মেট্রিকটন সরিষা কৃষক ঘরে তুলতে পারবে। এছাড়াও মৌওয়ালরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সরিষা ক্ষেত থেকে প্রায় ৩ শত বক্সের মাধ্যমে কয়েক শত কেজি মধু সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুল ইসলাম বলেন, সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে সরিষার ফলন প্রায় ১০-১৫ ভাগ বেড়ে যায়। এবং সরিষার ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সরিষা ক্ষেত থেকে বিনা খরচে মধু সংগ্রহ একটি লাভজনক ব্যবসা। এতে মৌমাছি ব্যবসায়ী যেমন একদিকে মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন, অন্যদিকে ক্ষেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও বাড়ে। কয়েকজন সরিষা চাষি জানান,শুধু গোবর সার দিয়ে জমি চাষের পর বীজ ছিটিয়ে দিতে হয়। তারপর গাছ বড় হলে সেচ দিতে হয়। সার বা কীটনাশক তেমন একটা দিতে হয় না।এ কারণে সরিষা চাষে অনেক লাভ। তাছাড়া এলাকার অনেক চাষি উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা বীজ সরকারিভাবে বিনামূল্যে পেয়ে বেশ সরিষা আবাদে ঝুঁকেছেন। কেমন ফলন আশা করছেন? জিঞ্জাসা করলে মুচকি হেসে চাষিরা বলেন, বিঘা প্রতি ৭ থেকে ৯ মন তো হবেই ইনশাল্লাহ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সহীদুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলার প্রায় ৫ হাজার কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। সরিষা চাষ সম্প্রসারণের জন্য কৃষি বিভাগ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকালে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি জানান।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!