দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা মাগুরা টেক্সটাইল মিলস নতুন করে প্রাণ ফিরে পেতে যাচ্ছে। মিলটির প্রায় শতবর্ষ পুরোনো যন্ত্রপাতি সম্প্রতি নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করেছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি)। করপোরেশনের দাবি, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে মিলটি পুনরায় চালু করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিটিএমসির তথ্য মতে, পুরোনো মেশিনারিজ বিক্রির জন্য ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয় ‘মেক পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান, যাদের প্রস্তাবিত মূল্য ছিল ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ ৬ কোটি ২৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। ২০২৫ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে প্রতিষ্ঠানটি ধাপে ধাপে যন্ত্রপাতি সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে।
কেন বিক্রি হলো পুরোনো যন্ত্রপাতি?
বিটিএমসি জানায়, মিলটির মেশিনগুলো প্রায় ১০০ বছর পুরোনো এবং অধিক বিদ্যুৎ খরচে অকার্যকর হয়ে পড়ে। এর ফলে উৎপাদিত সুতার বাজারে চাহিদা ছিল না বললেই চলে। এছাড়া, পুরোনো যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণেও সমস্যা দেখা দেয়। নতুন বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতেই এই যন্ত্রপাতি বিক্রি করে মিলটিকে ‘নতুন রূপে’ চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
মিলটির ইতিহাস
১৯৮০-৮১ অর্থবছরে মাগুরা পৌরসভার ভায়না এলাকায় ১৬.১৭ একর জায়গায় মিলটি স্থাপন করা হয়। নির্মাণ ব্যয় ছিল ৫১ কোটি টাকার বেশি। ১৯৮৫ সালে উৎপাদন শুরু করলেও ১৯৯৯ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সীমিত পরিসরে চালু থাকলেও ২০০৮ সালে চূড়ান্তভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে আবার চালুর চেষ্টা হলেও তা বেশিদূর এগোয়নি।
নতুন বিনিয়োগের সুযোগ
সরকার ৩০ বছরের জন্য মিলটি বেসরকারি বিনিয়োগকারীর হাতে তুলে দিতে চায়। বিনিয়োগকারীরা পাবেন কারখানা স্থাপন, সংস্কার ও পরিচালনার পূর্ণ সুযোগ, সঙ্গে নিষ্কণ্টক জমি, সাশ্রয়ী শ্রমিক ও উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা—পদ্মা সেতু চালুর পর যাতায়াতে সুবিধা আরও বেড়েছে।
স্থানীয়দের প্রত্যাশা
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, মিলটি চালু হলে বহু বেকার মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। একসময় এখানেই কর্মরত ছিলেন এলাকার শত শত মানুষ। ফলে মিলটির নতুন করে চালু হওয়া শুধু একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি হতে পারে জেলার অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের প্রতীক।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!