ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান সংঘাত দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে। দুই দেশই পারস্পরিক হামলায় শীর্ষ সামরিক কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হারাচ্ছে। তবে প্রশ্ন উঠছে—এই যুদ্ধ কতদিন আর্থিকভাবে চালিয়ে যেতে পারবে তারা?
🔥 যুদ্ধের খরচে দিশেহারা ইসরায়েল
ইসরায়েল এখন গাজা ও ইরান—দুই ফ্রন্টেই লড়ছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়, শুধু গাজা যুদ্ধেই ইসরায়েলের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৬৭০৫ কোটি ডলার। ইরানের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর মাত্র দুই দিনেই ব্যয় হয়েছে ১৪৫ কোটি ডলার।
পর্যটন, ব্যবসা, উৎপাদন খাত সবখানেই ধস। ৬০ হাজার কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে ২০২৪ সালে। এমনকি আন্তর্জাতিক ঋণ রেটিং সংস্থা S&P সতর্ক করেছে—যুদ্ধ চলতে থাকলে ইসরায়েলের ক্রেডিট রেটিং A থেকে A- এ নামিয়ে আনা হতে পারে।
🛢️ ইরানের তেলনির্ভর অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত
ইরানের অর্থনীতির মূল ভিত্তি—তেল রপ্তানি। কিন্তু ইসরায়েলের হামলার পর খার্গ দ্বীপ থেকে রপ্তানি বন্ধ। গ্যাস উৎপাদনের ৮০% নির্ভরশীল সাউথ পার্স গ্যাসক্ষেত্রও আংশিক বন্ধ ছিল কয়েকদিন।
বিশ্লেষণ সংস্থা কেপলার জানিয়েছে, ইরানের তেল রপ্তানি এক লাখ ব্যারেলের নিচে নেমে এসেছে, যেখানে পূর্বাভাস ছিল ২.৪ লাখ ব্যারেল।
🚫 নিষেধাজ্ঞার ফাঁদে ইরান
ইরানের অর্থনীতির আরেক বড় বাধা দীর্ঘমেয়াদী মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ব্যাপকভাবে কমেছে। ২০২২ ও ২০২৩ সালে তেল রপ্তানি থেকে আয় মাত্র ৫০ বিলিয়ন ডলার, যা আগের তুলনায় প্রায় ১০% কম।
তবে এখনো চীন ইরানের প্রধান তেল ক্রেতা হিসেবে রয়ে গেছে, যা কিছুটা স্থিতি দিয়েছে ইরানের অর্থনীতিকে।
📉 দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
ইসরায়েলের বৈদেশিক ঋণ বেড়ে যাচ্ছে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমছে।
ইরানের অর্থনীতিও নিষেধাজ্ঞা, তেল রপ্তানি বন্ধ এবং অবকাঠামো ধ্বংসে ক্ষতিগ্রস্ত।
উভয় দেশেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে, মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধ দীর্ঘ হলে দুই দেশই ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দায় পড়তে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে এ ধরনের সংঘাত শুধু স্থানীয় অর্থনীতিকে নয়, বিশ্বজুড়ে জ্বালানি ও পণ্যবাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!