আমতলীতে ব্যবসায়ী নিয়াজ মোশের্বদ তনয়ের আত্মহত্যার ঘটনায় স্ত্রী ফারিয়া জান্নাতি মীম, চাচা শ্বশুর আতিক মঞ্জু গাজী ও শ্ব্শুর ফারুক গাজীসহ ১২ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তনয়ের বড় বোন অ্যাডভোকেট তানিয়া আক্তার বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে আমতলী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ এ মামলার আসামী মোঃ খালিদকে রাতেই গ্রেপ্তার করেছে। শুক্রবার বিকেলে পুলিশ আসামী খালিদকে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন।
আমতলী থানার ওসি মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, নিয়াজ মোশের্বদ তয়নকে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এরমধ্যে খালিদ নামের এক আসামীকে গ্রেপ্তার করেছি। তিনি আরো বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামী খালিদকে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মামলার বিররন সুত্রে জানাগেছে, চার বছর আগে আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আলহাজ্ব নান্নু মোল্লার ছেলে নিয়াজ মোশের্বদ তনয়ের সঙ্গে আরেক ব্যবসায়ী চাওড়া চলাভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ফারুক গাজীর মেয়ে ফারিয়া জান্নাতি মীমের বিয়ে হয়।
বিয়ের ছয় মাস পর স্বামী তনয় জানতে পারে তার স্ত্রী মীমের আরো একটি বিয়ে হয়েছিল। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্ধ হয়। ওই দম্পতির ঘরে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ইতিমধ্যে তার স্ত্রী ফারিয়া জান্নাতি মীম তারেক হাসান বাহাদুর নামের এক ছেলের সঙ্গে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়েছে। পরকিয়া প্রেমিক নিয়ে তিনি (মীম) বিভিন্ন স্থানে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে এবং টিকটক ভিডিও তৈরি করে সোসাল মিডিয়ায় প্রচার করছে। এতে ক্ষুব্দ হয়ে তনয় স্ত্রী মীমকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর তালাক দেয়। তালাক নোটিশ পেয়ে ১৭ অক্টোবর মীম তার স্বামী নিয়াজ মোশের্বদ তনয়ের বিরুদ্ধে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে যৌতুক মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই পুলিশ তনয়কে গ্রেপ্তার করেন। এ মামলায় তনয় ১১ দিন জেল হাজতে ছিল।
এছাড়া গত ২১ নভেম্বর সন্ধ্যায় চাচা শ্বশুর আতিক মঞ্জু গাজী নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তনয়কে তার বাড়ীতে হত্যা করতে আসে। কিন্তু তাকে না পেয়ে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে চলে যায় বলে মামলায় উল্লেখ করছেন। মামলায় আরো উল্লেখ করেছেন গত ২৮ নভেম্বর মামলার বাদী অ্যাডভোকেট তানিয়া আক্তার আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যাওয়ার পথে তনয়ের চাচা শ্বশুর আতিক মঞ্জু গাজী ও আসামীরা তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এছাড়াও আসামী ফারিয়া জান্নাতি মীম ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা স্বামী তনয়কে বিভিন্ন ভাবে বুলিং ও হয়রানী করতো বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। এতে নিয়াম মোশের্বদ তনয় মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে। ফলে সে আত্মহত্যার সিধান্ত নেয়। স্ত্রীর পরকিয়া ও তার পরিবারের লোকজনের বুলিং ও হয়রানীর এমন কর্মকান্ড সইতে না পেরে গত ২৯ নভেম্বর ভোররাতে তনয় স্ত্রী, শ্বশুর, শ্বাশুড়ীর ও তার স্বজনদের নির্যাতনের বর্ননা স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে বিষপান করেন।
মুহুর্তের মধ্যে তার স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে গত শুক্রবার সকালে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ মনিরুজ্জামান খাঁন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরন করেন।
ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। ওই হাসপাতালে তনয় শনিবার দুপুরে মৃত্যুবরণ করেছেন। ব্যবসায়ী তনয়ের মৃত্যুকে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ওইদিন সন্ধ্যায় ঢাকা শহীদ সোহরাওয়াদী হাসপাতালে তার মহদেহের ময়না তদন্ত করা হয়েছে। তনয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী মীম, তার বাবা ফারুক গাজী ও তাদের স্বজনরা গা-ঢাকা দিয়েছেন। গত রবিবার সকালে প্রায় ১০ হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষের উপস্থিতিতে জানাযার নামাজ শেষে তার মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে আমতলী থানায় তনয়ের বড় বোন অ্যাডভোকেট তানিয়া আক্তার বাদী হয়ে তনয়ের স্ত্রী ফারিয়া জান্নাতি মীমকে প্রধান আসামী করে ১২ জনের নামে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন। ওই রাতেই পুলিশ মীমের বড়ভাই আসামী খালিদ গাজীকে গ্রেপ্তার করেছে। শুক্রবার বিকেলে পুলিশ তাকে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন।
নিয়াজ মোশের্দ তনয়ের বড় বোন মামলার বাদী অ্যাড. তানিয়া আক্তার বলেন, আমার ভাইকে আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আশা করি আমি ন্যায় বিচার পাব।
স্ত্রী ফারিয়া জান্নাতি মীম ও তার বাবা ফারুক গাজীর মুঠোফোনে (০১৭১৩৯৫৮৭৯৭) যোগাযোগ করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!