কুমিল্লা শহরে আবারও ত্রাস হয়ে ফিরে এসেছে কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি। অল্প বয়সী কিশোর-তরুণদের বেপরোয়া কার্যকলাপে তটস্থ হয়ে পড়েছে নগরবাসী। ২০১৭ সালের পর থেকে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতায় বিগত ৮ বছরে অন্তত ১২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি মাদক কারবার, ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং ইভ টিজিংয়ের মতো অপরাধে ক্রমাগত জড়াচ্ছে এ গ্যাংগুলো।
সর্বশেষ, শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে নগরের কান্দিরপাড় এলাকায় ভিক্টোরিয়া কলেজের পাশে রানীর দিঘির পাড়ে এক জঙ্গি পরিস্থিতির সৃষ্টি করে কিশোর গ্যাংয়ের অর্ধশতাধিক সদস্য। অস্ত্র হাতে মহড়া এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে স্থানীয়রা।
কান্দিরপাড় এলাকার এক ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান বলেন, “শুক্রবার বিকেলে রানীর বাজার সড়ক দিয়ে দোকানের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি, কিশোর গ্যাং অস্ত্র নিয়ে এগিয়ে আসছে। ভয়ে প্রাণটা যেন গলায় উঠে গিয়েছিল। নিয়মিত পুলিশের অভিযান না থাকায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।”
- কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান ও তৎপরতা:
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকেই কুমিল্লায় কিশোর গ্যাং কালচারের সূত্রপাত ঘটে। রতন ও ঈগল নামে দুইটি গ্যাং গ্রুপ ছাড়াও নগরে আরও প্রায় ২০টি সক্রিয় গ্যাং রয়েছে, যাদের মধ্যে র্যাক্স, এক্স, এলআরএন, সিবিক, মডার্ন, রকস্টার, ডিস্কো বয়েজ ও বসের মতো নাম শোনা যায়। এসব গ্যাং নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রকাশ্যে সহিংসতায় জড়ায়।
গত ৪ ডিসেম্বর রাতে নগরের অশোকতলা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় সজীব হোসেন বাবু (২২) নামের এক তরুণ নিহত হন। মাদকের কারবার নিয়ে বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ২০২২ সালে এমন বেশ কিছু নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে, যার মধ্যে ফয়সাল ইসলাম (১৯) এবং শাহাদাত হোসেন (১৫)-এর নির্মম হত্যা উল্লেখযোগ্য।
- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জ:
কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিনুল ইসলাম বলেন, "এসব কিশোর গ্যাং আগে ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণির নেতাদের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়েছিল। এখন তারা বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করছে।"
ওসি আরও জানান, গত শুক্রবারের ঘটনায় জড়িতদের ধরতে অভিযান চলছে এবং সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। যদিও বিগত সময়ে কয়েকটি অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল গ্যাং সদস্যদের, তবে অনেককে মুচলেকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
- সচেতন নাগরিকদের উদ্বেগ:
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর বলেন, "পুলিশ বাহিনী দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কার্যকর উদ্যোগ দরকার।"
কুমিল্লা শহরে কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কিশোরদের সঠিক পথে পরিচালিত করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!