মাত্র ৪ বছর ৬ মাস বয়সে মাত্র ১০ মাসের মধ্যে কোরআনুল কারিম সম্পূর্ণ হিফজ করে বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আহমাদ আবদুল্লাহ মাসুম। এই অর্জন শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বে বিরল।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকায় অবস্থিত মাদরাসাতু উসওয়াতি ফাতিমাহ রাদিয়াল্লাহু আনহায় তার হিফজ সম্পন্ন হয়। আশ্চর্যের বিষয়, তার শিক্ষক ছিলেন তারই মা, যিনি অসীম ধৈর্য, ভালোবাসা ও আন্তরিকতার সঙ্গে এই কাজটি সম্পন্ন করিয়েছেন। হিফজের পাশাপাশি আহমাদ কোরআনের বাংলা অর্থও শিখেছে, যা তার প্রতিভার অনন্য প্রমাণ।
বিশ্বখ্যাত কারি ও বিচারক শায়খ আহমাদ বিন ইউসুফ আজহারী জানিয়েছেন, এ ধরনের অর্জন বিশ্বে খুবই বিরল। যদিও ইরান ও আলজেরিয়ার কয়েকটি শিশু ৫ বছর বয়সে হিফজ সম্পন্ন করেছে, তবে আহমাদের মতো সাড়ে ৪ বছরে এই অর্জন অনন্য।
বাবা-মায়ের অনুভূতি
আহমাদের বাবা, জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মাসুম বিল্লাহ বিন রেজা জানান, “মহান আল্লাহর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা যে, তিনি আমার সন্তানের মাধ্যমে আমাদের এমন গৌরব দান করেছেন। এই অর্জন শুধু আমাদের জন্য গর্বের নয়, বরং এটি একটি বড় দায়িত্ব। আমরা চাই, আহমাদ যেন সারা বিশ্বের মানুষের জন্য কোরআনের আলো ছড়িয়ে দেয়। সবার কাছে দোয়া চাই, আল্লাহ যেন তাকে সৎ, পরিপূর্ণ আলেমে দীন হিসেবে কবুল করেন।”
বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া
হাদিস ফাউন্ডেশন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. আহমাদ আবদুল্লাহ ছাকিব বলেন, “এই বিস্ময় শিশুটি শুধু কোরআন মুখস্থ করেনি, বরং বাংলা, ইংরেজি ও আরবি ভাষায় ঝরঝরে রিডিং করতে পারে। তার আরবি কথোপকথন দক্ষতাও অসাধারণ। এভাবে এগিয়ে গেলে সে একদিন বিশ্বমানের আলেম হিসেবে গড়ে উঠবে।”
কুয়েত প্রবাসী দাঈ শায়খ হাবিবুর রহমান মাদানী বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ এই শিশুকে ও তার পরিবারকে বিশেষ তৌফিক দিয়েছেন। এটি আমাদের জন্য যেমন অনুপ্রেরণার, তেমনি প্রশান্তির সংবাদ। আল্লাহ তাকে ইসলামের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ হিসেবে কবুল করুন।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. হাফেজ হুসাইনুল বান্না বলেন, “এটি আল্লাহর মেহেরবানির প্রতিফল। আহমাদ যেন যুগের সেরা আলেমে দীন হয়ে ওঠে, এটাই আমার দোয়া।”
দেশের জন্য গৌরব
রাজধানীর মানিকনগরের মারকাজুশ শাইখ আরশাদ আল মাদানির পরিচালক মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী বলেন, “এত অল্প বয়সে এত দ্রুত হিফজ সম্পন্ন করার ঘটনা বিশ্বে বিরল। আহমাদ যেন বিশ্বসেরা আলেম ও দাঈ হিসেবে গড়ে ওঠে, আল্লাহ তাকে সেই তৌফিক দান করুন।”
বাংলাদেশের মায়েদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শায়খ সাইফুল ইসলাম বলেন, “আপনারা যদি সন্তানদের কোরআনের প্রতি ভালোবাসা ও অধ্যবসায় শেখাতে পারেন, তবে এমন বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন সম্ভব। সন্তানদের মননশীলতা ও প্রতিভা বিকাশে সময় দিন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সৎ ও সাফল্যমণ্ডিত সন্তান গড়ে তোলার তৌফিক দিন।”
আহমাদ আবদুল্লাহ মাসুমের এই অর্জন সারা দেশের জন্য একটি বড় গৌরব। আল্লাহ তাকে সকল জ্বীন-ইনসানের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন এবং তাকে সৎ পথে পরিচালিত করুন—এ দোয়াই সবার।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!