গাজা যেন রূপ নিয়েছে মৃত্যুপুরীতে। প্রতিদিন সেখানে ঘটছে একের পর এক লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞ। শিশুর কান্না, মায়ের আর্তনাদ, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া স্বপ্ন—সবকিছুই যেন এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের নাম আজ ‘গাজা’।
ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার হামলায় ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৫০,৭০০’রও বেশি ফিলিস্তিনি। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১,১৫,৩০০। যুদ্ধের ভয়াবহতায় গুঁড়িয়ে গেছে গাজার সম্পূর্ণ অবকাঠামো। হায়নার মতো হিংস্র আচরণে যেন অতীতের সব নিষ্ঠুরতাকেও হার মানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
শুধু পুরুষ নয়, নিহতদের বড় অংশই নারী ও শিশু। এ যেন এক পরিকল্পিত গণহত্যা। অথচ মানবাধিকারের দোহাই দেওয়া পশ্চিমারা এখন নিরব দর্শক। বরং তারা নিজেরাই যুদ্ধের আগুনে ঘি ঢালছে। জাতিসংঘসহ তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠনগুলোও মুখে কুলুপ এঁটেছে।
বিগত মাসে গাজায় নতুন করে বিমান ও স্থল হামলা শুরু করে ইসরায়েল, যুদ্ধবিরতি ভেঙে। এতে এক মাসেই নিহত হয়েছেন প্রায় ১,০০০ ফিলিস্তিনি, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।
এক সালাহুদ্দিন আইয়ুবির অপেক্ষা...
আজকের ফিলিস্তিন তাকিয়ে আছে একজন সালাহুদ্দিন আইয়ুবির দিকে, যিনি ইসরায়েলের দম্ভ চূর্ণ করে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করবেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এ যুগের সেই সালাহুদ্দিন কি আদৌ জন্মেছেন? মুসলিম বিশ্ব যেন নিস্তব্ধ, নিরুত্তাপ।
আমরা কেবল একফাঁরে কিছু বিক্ষোভ, কিছু বয়কট, তারপর আবার আগের মতো হয়ে যাই। অথচ ফিলিস্তিনিদের এই যুদ্ধ আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। আমাদের উচিত দীর্ঘস্থায়ীভাবে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া।
বয়কটেই প্রতিবাদ, বয়কটেই শক্তি!
ইসরায়েলি পণ্য বয়কট আন্দোলন কিছু সময়ের জন্য নয়—এটা হওয়া উচিত নিরবিচারে চলমান। পণ্যের গায়ে যদি ফিলিস্তিনি রক্ত মাখা থাকে, তবে সেই পণ্য আমাদের ঘরে ঠাঁই পেতে পারে না। ইতিহাস সাক্ষী, বিশ্বব্যাপী সংঘবদ্ধ বয়কট ইসরায়েলের অর্থনীতিকে বেশ কয়েকবার কাঁপিয়ে দিয়েছে। সুতরাং, এই আন্দোলনে আমরা যেন অনড় থাকি।
বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ, মুসলিম বিশ্বের ক্ষোভ
গাজায় বর্বর হামলার প্রতিবাদে মরক্কোসহ তিউনিসিয়া, ইয়েমেন এবং উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন শহরে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। মরক্কোর অর্থনৈতিক কেন্দ্র কাসাব্লাঙ্কায় হাজারো মানুষ ট্রাম্পের প্রস্তাব ও বাইডেন প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন।
বিক্ষোভকারীরা মনে করছেন, ট্রাম্প ও বাইডেনের নীতি একসূত্রে গাঁথা। একমাত্র পার্থক্য—ট্রাম্প যা প্রকাশ্যে করেন, বাইডেন তা করেন ছদ্মবেশে।
মরক্কোর এক বাসিন্দা বলেন, "এটা কোনো যুদ্ধ নয়—গাজাকে ধ্বংস করে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা চলছে।"
২০২০ সালে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পর থেকেই মরক্কোর জনগণের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। আজকের এই গণবিক্ষোভ যেন সেই চাপা ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!