স্টাফ রিপোর্টার - ইমরান হক।।
দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কোনো আপস করবে না বলে জানিয়েছে সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেট শাখা। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনো টানাপোড়েন নেই।
তবে দেশের স্বার্থে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আপসহীন। করিডোর দেওয়া নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, সেটি জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কাজে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না।
২৬মে সোমবার ঢাকা সেনানিবাসের বনানীর অফিসার্স মেসে প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটে (কর্নেল স্টাফ) কর্নেল মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন। ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম-উদ-দৌলা সাংবাদিকদের সঙ্গে অত্যন্ত খোলামেলাভাবে কথা বলেন।
রাষ্ট্র পরিচালনায় বর্তমান সরকারকে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা, করিডোর ইস্যু, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি এবং আরাকান আর্মির বিষয়ে সেনাবাহিনীর অবস্থানসহ নানা বিষয়ে বক্তব্য স্পষ্ট করা হয় ব্রিফিংয়ে। গত বুধবার সেনাসদরে সেনাপ্রধানের অফিসার্স অ্যাড্রেসের আলোচনার বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে আসার পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেনাবাহিনী নিয়ে নানা অপপ্রচার শুরু হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সেনাসদরের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর অবস্থান তুলে ধরা হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উল-দৌলা বলেন, সরকার ও সেনাবাহিনী খুব সুন্দরভাবে একে অপরের সম্পূরক হিসেবে কাজ করছে। আমরা প্রতিনিয়ত সরকারের সঙ্গে কাজ করছি এবং সরকারের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করছি। সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্য নেই। সরকার ও সেনাবাহিনী ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা করছে এরকম যেন আমরা না ভাবি। সরকার ও সেনাবাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে, ভবিষ্যতেও আমরা আরো সুন্দরভাবে কাজ করে যাব বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর। গত ৫ আগস্টের পর থেকে সেনাবাহিনী দেশের স্বার্থে সবার সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
তিনি আরো বলেন, করিডোরের (মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডোর) বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এটা আমাদের দেশ, আমাদের সবার দেশ। এ দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আমরা সবাই জড়িত। দেশকে ভালো রাখতে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। সুতরাং আমি মনে করি না যে, এ বিষয়টি এমন কোনো একটি পর্যায়ে যায়নি, যেভাবে বিষয়টা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
চট্টগ্রামের একটি কারখানায় সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফের পোশাক পাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকরা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, পোশাক পাওয়ার সংবাদটি একটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ। সংগঠনটির অস্ত্রের ব্যবহার আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখেছি। তাদের আক্রমণে আমাদের কয়েকজন সেনাসদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন এবং আহতও হয়েছেন। সেই প্রেক্ষাপটে নিশ্চয়ই এটা ভালো কোনো খবর নয়। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর পেলাম সেখানে ৩০ হাজার ইউনিফর্ম পাওয়া গেছে। ৩০ হাজার ইউনিফর্ম পাওয়ার ছবি দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, ব্যাপারটা কী এ বিষয়ে আমাদের জানতে হবে। এ পোশাক কাদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, সেটা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এটা নিয়ে কাজ চলছে। এ সংগঠনের সঙ্গে অন্যদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।
তিনি আরো বলেন, অবশ্যই আমরা বর্ডার কম্প্রোমাইজ করিনি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের গায়ে বিন্দুমাত্র শক্তি থাকবে, আমরা কখনোই বর্ডার কম্প্রোমাইজ করব না। এটা আমাদের দেশ, আর দেশকে আমরা যে কোনো মূল্যে রক্ষা করব। কোনো একটা সম্প্রদায়ের মাধ্যমে এ দেশের সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হতে পারে সেটা কখনোই হবে না। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বর্ডার অত্যন্ত জটিল একটি পরিস্থিতির মুখে আছে। মিয়ানমার সরকারের অস্তিত্ব বিলীনের মুখে। আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যটিকে প্রায় দখল করে নিয়েছে। তাদের দখলে রাখাইন রাজ্যের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ রয়েছে। আরাকান আর্মি কোনো অথরাইজড সংগঠন নয়। এ জায়গাটাতে না আছে কোনো সরকারের অস্তিত্ব, না আছে আরাকান আর্মিকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি।
তিনি আরো বলেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বর্ডার পরিস্থিতি যে কোনো সময়ের তুলনায় সংবেদনশীল। সেক্ষেত্রে এ সময়ে ওই এলাকায় কিছু সশস্ত্র গ্রুপের মুভমেন্ট করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তার মানে এ নয় যে, এটাকে আমরা স্বীকৃতি দেব বা দেখেও না দেখার ভান করব। এ ধরনের ঘোলাটে পরিস্থিতিতে এ ধরনের মুভমেন্ট হতে পারে; কিন্তু আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, বিজিবি প্রাথমিকভাবে ডেফিনেটলি সাপোর্টেড বাই আর্মি, আমরা এই বর্ডারে প্রচণ্ডভাবে নজরদারি রাখছি। এখানে যেন সার্বভৌমত্ব বিঘ্নিত হতে না পারে, এমন পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে আমরা ওয়াকিবহাল আছি। তবে অবশ্যই এই মুভমেন্টটা উদ্বেগের বিষয় এবং কাঙ্ক্ষিতও নয়।
তিনি আরো বলেন, সীমান্তে পুশ ইন কোনোভাবেই কাম্য নয়, সেনাবাহিনী যুক্ত হওয়ার প্রয়োজন হলে সরকারের নির্দেশনায় যুক্ত হবে। আরাকান আর্মির সঙ্গে সেনাবাহিনীর সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই। আরাকান আর্মি একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের প্রশ্নই ওঠে না।
লালমনিরহাট বিমানবন্দরের বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের বিমানবাহিনীর সক্ষমতা বাড়ছে বলেই লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালু হয়েছে। সেখানে এরোস্পেসের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা অর্জন করছে।
সাম্প্রতিক বিশৃঙ্খলা নিয়ে তিনি বলেন, কেউ মব তৈরি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে সেনাবাহিনী তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। কোনো বিচারহীনতা মেনে নেওয়া হবে না।
সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটে (কর্নেল স্টাফ) কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম জানান, সেনাবাহিনী জনসাধারণকে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোসহ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ এবং আনন্দঘনভাবে ঈদ উদ্যাপনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
সংবাদ সম্মেলনে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লে. কর্নেল সামি-উদ-দৌলা চৌধুরী ও সহকারী পরিচালক রাশেদু
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!