মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত রাজনৈতিক দল বা সংগঠন নিষিদ্ধ করার বিধানসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধনের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সংশোধনীতে উল্লেখ করা হয়েছে, খুন, গুম, নির্যাতনের মতো অপরাধে কোনো দল বা সংগঠন দোষী প্রমাণিত হলে তাদের নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিল করা যাবে। এই সংশোধনী অল্প সময়ের মধ্যে অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হতে পারে, কারণ বর্তমানে সংসদ না থাকায় তা আইন হিসেবে পাশ করা সম্ভব নয়।
আইনজীবীদের একাংশ এই সংশোধনী নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের মতে, দেশে ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের সুযোগ রয়েছে। ১৯৭৮ সালের পলিটিক্যাল পার্টিস অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, হাইকোর্টের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়। নতুন সংশোধনী বিতর্কের জন্ম দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
- ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিচার শুরু
গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বর্তমানে আওয়ামী লীগের শাসনকালে সংঘটিত গণহত্যা ও গুমের অভিযোগের বিচার শুরু করেছে। এর জন্য ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন সংশোধন করে বিচারকাজ আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ তাদের শেষ সময়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে জামায়াতে ইসলামীর মতো দলকে নিষিদ্ধ করলেও বর্তমান সরকার সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। তবে একই সময় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে।
- মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞায় নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত
সংশোধনীতে গুম, যৌনদাসী বানানো, জোরপূর্বক গর্ভধারণ ও বন্ধ্যত্বকরণের মতো অপরাধগুলোকে মানবতাবিরোধী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কমান্ডার বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও বিচারের আওতায় আনার বিধান রাখা হয়েছে।
- অপরাধের বিচার দেশের সীমানা ছাড়াবে
সংশোধিত আইনে বাংলাদেশের জলসীমাসহ বিদেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার বিধান রাখা হয়েছে। দেশের নাগরিক কিংবা বিদেশি—যেই অপরাধ করুক না কেন, এই আইন অনুযায়ী তার বিচার করা যাবে।
- অডিও-ভিডিও প্রমাণ গ্রহণের বিধান
নতুন সংশোধনীতে অডিও ও ভিডিওকে দালিলিক প্রমাণ হিসেবে গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তাদের যেকোনো স্থানে তল্লাশি করার ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরাও এই বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন।
- সরকারের মতামত
সরকারি সূত্র জানায়, এই সংশোধনী আইনের অস্পষ্টতাগুলো দূর করবে এবং বিচারকাজকে গতিশীল করবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, সংশোধনী প্রস্তাব বিচার প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করতে সাহায্য করবে।
- পাঠকের মতামত:
আপনারা কী মনে করেন? রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের নতুন বিধান কতটা কার্যকর হবে? মতামত জানাতে আমাদের কমেন্ট সেকশনে যোগ দিন।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!