বাংলাদেশ একসময় পাট উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষস্থান অধিকার করেছিল, যার ফলে পাটকে বলা হয় “সোনালি আঁশ।” তবে বর্তমান সময়ে পরিবেশবান্ধব পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও, বাংলাদেশ তার ঐতিহ্যবাহী পাটপণ্য শিল্পে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে। প্রশ্ন ওঠে, কেন পাটের মতো মূল্যবান একটি সম্পদ থাকা সত্ত্বেও আমরা এই শিল্পে এগোতে পারছি না? এর পেছনে রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ, যা দেশের অর্থনীতির অন্যতম সম্ভাবনাময় খাতটিকে সংকটে ফেলছে।
প্রযুক্তিগত দুর্বলতা একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত। পাটশিল্পে আধুনিক প্রযুক্তির অভাব এবং পুরনো যন্ত্রপাতির ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি গবেষণা ও উন্নয়নেও বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। পাটের নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় গবেষণা ও প্রযুক্তি সংযোজন না হওয়ায়, উৎপাদনে বৈচিত্র্য আসছে না।
দেশীয় বাজারে পাটপণ্যের চাহিদা এখনও কম, ফলে অভ্যন্তরীণ বিক্রিও খুব একটা বাড়ছে না। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে সস্তা প্লাস্টিক ও সিনথেটিক পণ্যগুলোও বাংলাদেশের পাটপণ্যকে প্রতিযোগিতায় চাপে ফেলছে।
সরকারি সহযোগিতা ও প্রণোদনার অভাবও এক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করেছে। যেখানে উন্নত অনেক দেশ পাটশিল্পের উন্নয়নে নানাবিধ প্রণোদনা দিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে তেমন কার্যকর নীতি বা সহায়তার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
এছাড়া, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের পাটপণ্যের সঠিক ব্র্যান্ডিং ও বিপণন কৌশলের অভাবে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পায়নি এই সেক্টরটি। পাটশিল্পে নতুন উদ্যোক্তারাও বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না; বরং তারা প্রযুক্তি বা দ্রুত মুনাফা পাওয়া খাতে বিনিয়োগ করছেন।
বাংলাদেশের এই মূল্যবান খাতটি পুনরুজ্জীবিত করতে চাইলে প্রয়োজন প্রযুক্তি ও গবেষণায় উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাটপণ্যের প্রচার এবং সরকারি প্রণোদনা। সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ আবারও সোনালি আঁশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সুনাম ফিরে পেতে পারে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!