হরিলুটের প্রকল্প বানিয়াচংয়ের গড়ের খাল। নিয়মনীতি না মেনেই তড়িগড়ি করে কাজ শেষ করলো কর্তৃপক্ষ। এ কাজ দেখিয়ে ইতিমধ্যে বিল উত্তোলন করা হয়েছে সাড়ে ৪ কোটি টাকার উপরে। এদিকে এ কাজটি সঠিকভাবে না করে বিল উত্তোলন করায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্হানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বানিয়াচং সদরের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজনের মধ্যে। তাদের দাবী অনেক জায়গায় মাটি উত্তোলন না করেই সেখানে মাটি উত্তোলন দেখানো হয়েছে। বাস্তবে গড়ের খালের অনেক জায়গাতেই মাটি কাটা হয়নি বলে তারা জানান। সম্রাট আকবরের আমলে স্বাধীন রাজ্য বানিয়াচংয়ের প্রতিরক্ষার জন্য স্বাধীন রাজা আনোয়ার খাঁ বানিয়াচংয়ের চতুর্দিকে পরিখা খনন করেন। যা গড়ের খাল নামে পরিচিত।
ঐতিহাসিক গড়ের খাল অপরিকল্পিত ভাবে খনন করায় সরকারের দেওয়া কোটি কোটি টাকার পুরোটাই ভেস্তে গেছে। গাইড ওয়াল ও সীমানা নির্ধারণ না করেই এই খালটি পূন:খনন করায় পুনরায় আগের চেহেরায় ফিরে গেছে। হরিলুটের প্রকল্প গড়ের খালে অপরিকল্পিত ভাবে কাজ করতে গিয়ে স্হানীয় ভাবে এবং সরকারি অর্থে নির্মিত ছোট বড় প্রায় ২৫টি কালভার্ট ভেঙে ফেলে দেওয়া হয়েছে। টাকার অংকে এর ক্ষতির পরিমান দাড়াঁবে কোটি টাকার উপরে। এই কালভার্ট গুলো ভেঙে দেওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন হাওর পাড়ের কৃষক।
তাদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে কি ভাবে বাড়ী ফিরবেন এ চিন্তায় পড়েছেন হাজার হাজার কৃষক পরিবার। তাদের দূর্ভোগ চরমে। ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড এ প্রকল্পের মাধ্যমে আরো ৩টি শাখা খাল খননের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এ প্রকল্প গুলো ও সঠিক পন্হায় নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সব প্রকল্প বাস্তবায়ন না করতে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মৌখিক ভাবে অবগত করেছেন বানিয়াচং সদরের ১ নং ইউনিয়নপরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খান ২ নং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দারুজ্জামান খান ও ৩ নং ইউনিয়ন পরিষদের আরফান মিয়াসহ বিষিষ্ট নাগরিক গণ। সূত্র জানায়, বানিয়াচংয়ের চতুর্পাশ্বে ৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ৩১.৬ কিলোমিটার গড়ের খাল পুন:খনন করার টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পাদন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ পায় নেত্রকোনা জারিয়া বাজারের অসীম সিংহ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
২০২৩ সালের ২৮ জানুয়ারী এই খাল পুন:খনন কাজের উদ্বোধন করেছিলেন হবিগঞ্জ -২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ খান। তার পরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা তড়িগড়ি করে গড়ের খালে এক্সেভেটর দিয়ে মাটি খনন শুরু করে। খালের গভীরতা,প্রসস্হ,গাইড ওয়াল না দিয়ে, এমনকি সীমানা নির্ধারণ না করে নাম মাত্র খনন কাজ করা হয়। খনন করে অপরিকল্পিত ভাবে মাটি উচু নিচু করে খালের কিনারায় রাখা হয়। সরজমিন গিয়ে দেখা যায়,খনন কৃত স্হানের কিনারায় রাখার ফলে উভয় পাড়ের মাটি পুমরায় একই জায়গায় গিয়ে পড়েছে। কোথাও আবার মাটি পড়ে খাল আগের চেহেরায় ফিরে গেছে। গাইড ওয়াল ছাড়া গড়ের খাল পুন:খনন করায় সুফল পাচ্ছেন না বানিয়াচংবাসী।
মাটি খননের আগে খালের দুপাশে গাইড ওয়াল নির্মান করা প্রয়োজন ছিল বলে দাবী করেন স্হানীয় ইউ পি মেম্বার শহীদ মিয়া। তিনিসহ অনেকেই বলেন,গাইড ওয়াল ছাড়া যেন তেন ভাবে খাল খনন করায় গত বছরের বৃষ্টির পানিতে দুপাড়ের মাটি আবার খালে গিয়ে ভরাট হ'য়েগেছে। এ ছাড়া অনেক জায়গায় মাটি না কেটেই দেখানো হয়েছে মাটি কাটা হয়ে গেছে। কেউ এ কাজের প্রতিবাদ করলে মামলার ভয় ও দেখানো হয়েছে বলে অনেকেই জানান। স্হনীয়দের সুত্রে জানা যায়, অনেক জায়গা গভীর ও পানি থাকায় এক্সভেটর দিয়ে খাল খনন সম্ভব নয়। সরজমিন পরিদর্শনে তার প্রমান পাওয়া গেছে। অনেকের ধারণা ১ কোটি টাকার ও খনন কাজ হয়নি। এত দ্রুত খনন করা হয়েছে যা লোক দেখানো মাত্র।
এ কারণে যে উদ্দেশ্যে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন, সেটা মোটে ও সফল হয়নি। ভূমি খেকোদের দখলে থাকা খালের অনেক সরকারি জায়গা দখল মূক্ত না করেই লোক দেখানো পুন:খনন করা হয়েছে। যা বাস্তবে ৬ মাসে ও শেষ করার সম্ভব নয়।
তা একটি এক্সভেটর দ্বারা শেষ হয়ে গেছে। সরজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে অনেক জায়গায় খালের মাটি খালেই ফেলা হয়েছে। শরীফখানীসহ বিভিন্ন এলাকায় খালের গভীরতা বেশী থাকায় খাল খনন করা সম্ভব নয়। জনগণের মতে এভাবে খাল খনন করায় সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হয়েছে। খননের ফলে খালের সীমানা কমে আরো সরু হয়েছে। ফলে ক্ষতি গ্রস্হ হয়েছেন বানিয়াচংবাসী। বানিয়াচংয়ের সুশীল সমাজ মনে করেন,যে ভাবে খাল খনন করা হয়েছে, এভাবে খনন বরং দার্ভোগের কারণ। খালের সীমানা নির্ধারণ না করে ,গতি পথ পরিবর্তন করে খনন বানিয়াচংবাসীর কোন কাজেই আসছে না। বরং ভোগান্তির শিকার। , যে সব প্রভাবশালীদের ছত্র ছায়ায় নামে মাত্র কাজ করে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী করেন বানিয়াচংবাসী। ১ নং ইউপির মেম্বার শহিদ মিয়া বলেন, গড়ের খাল খননের অনিয়মের বিরুদ্ধে জনগণ ফুঁসে উঠছে। তারা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হোসান মাহমুদ জানান,গড়ের খালের কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বাধাঁ প্রদান করা হয়েছে। যার ফলে পুরো কাজটি সম্পন্ন করা হয়নি। মাটি না কেটেই অনেক জায়গায় মাটি কাটা হয়েছে মর্মে দেখানো হয়েছে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এই প্রকল্পের টাকা থেকে ৩টি শাখা খাল খননের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। নতুন এ খাল খননের বিষয়ে স্হানীয় জনপ্রতিনিধিদের আপত্তি রয়েছে জানালে তিনি বলেন,লিখিত অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!