ইসলামের ইতিহাসে হজরত খাদিজা (রা.)-এর নাম উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করছে। তিনি শুধু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রথম স্ত্রীই নন, বরং তাঁর জীবনসঙ্গী, সান্ত্বনা ও সাহসের অবিচল উৎস ছিলেন। খাদিজা (রা.) ছিলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
কুরাইশ বংশের পবিত্র রত্ন
খাদিজা (রা.)-এর জন্ম কুরাইশ বংশে। তাঁর পিতা খুওয়াইলিদ এবং মাতা ফাতেমা বিনতে জায়িদা। তাঁর বংশপরম্পরা কুসাই পর্যন্ত পৌঁছে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বংশের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। তিনি ছিলেন আরবের জাহিলিয়াতের বর্বরতা ও কুপ্রথা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। এজন্যই তাঁকে ‘তাহেরা’ অর্থাৎ পবিত্র বলা হতো।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পাশে অবিচল সঙ্গী
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নবুয়তপ্রাপ্তির পর ইসলামের প্রচারে হজরত খাদিজা (রা.) অকাতরে তাঁর ধন-সম্পদ বিলিয়ে দিয়েছেন। সুখে-দুঃখে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সঙ্গ দিয়েছেন নিরলসভাবে। তাঁর সমর্থন ও আত্মত্যাগ নবুয়তপ্রাপ্তির প্রথম দিকের কঠিন সময়ে ইসলামকে শক্ত ভিত্তি দিয়েছে।
মৃত্যুর আগে বিশেষ অসিয়ত
মৃত্যুর আগে হজরত খাদিজা (রা.) একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জানতে চাইলেন, মৃত্যুর পর তাঁকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র চাদর ও পাগড়ি দিয়ে কাফন দেওয়ার অনুমতি আছে কি না। এই কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) কেঁদে ফেলেন। তিনি বললেন, তাঁর চামড়া চাইলে সেটাও তিনি দিতে প্রস্তুত, কিন্তু এসব কোনো কাজে আসবে না।
কবর আজাব থেকে রেহাইয়ের প্রার্থনা
খাদিজা (রা.) মৃত্যুর আগে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে অনুরোধ করেন, তাঁকে যেন কবরের মধ্যে কেবলামুখী করে রাখা হয়। মৃত্যুর পর রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজ হাতে তাঁকে কবরে শোয়ান। কিন্তু তাঁর শরীর পুনরায় সোজা হয়ে গেলে রাসুলুল্লাহ (সা.) উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
তখন আকাশ থেকে একটি সান্ত্বনামূলক আওয়াজ আসে, যেখানে বলা হয়, “হে আমার বন্ধু! আমি চাইনি, আপনার স্ত্রীর মুখ ধূলায় মলিন হোক। তাকে ওভাবেই থাকতে দিন, যেন সে শান্তিতে বিশ্রাম নিতে পারে।”
উপসংহার
হজরত খাদিজা (রা.)-এর জীবনের এই অবদান কেবল একটি পরিবারের নয়, বরং পুরো উম্মাহর জন্য এক অনুপ্রেরণা। তাঁর আত্মত্যাগ ও নবীজির প্রতি ভালোবাসা ইসলামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!