ইসলামে জুমার দিনকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে, এটি সপ্তাহের ঈদ বা শ্রেষ্ঠতম দিন হিসেবে চিহ্নিত। কোরআন ও হাদিসে এ দিনের ফজিলত ও গুরুত্ব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলিমরা এই দিনটি বিশেষভাবে পবিত্র মনে করে এবং বিভিন্ন আমল করে থাকেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "জুমার দিন সব দিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ" (মুসলিম, হাদিস ৮৫৬)।
কেন জুমার দিন এত গুরুত্বপূর্ণ?
ইসলামী ইতিহাসে জুমার দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষভাবে আল্লাহ তাআলা ও নবীজি এই দিনের গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন। হজরত আবু লুবাবা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. জুমার দিন শ্রেষ্ঠ হওয়ার পাঁচটি কারণ উল্লেখ করেছেন:
- আদম আ.-এর সৃষ্টি: আল্লাহ তাআলা এই দিনে প্রথম মানব আদম আ.-কে সৃষ্টি করেছেন।
- আদম আ.-এর পৃথিবীতে অবতরণ: একই দিনে আদম আ.-কে জমিনে অবতরণ করিয়েছেন।
- আদম আ.-এর মৃত্যু: এই দিনে হজরত আদম আ.-কে মৃত্যুর সম্মুখীন করা হয়েছিল।
- দোয়া কবুল হওয়ার সময়: এ দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যখন বান্দার দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেন, তবে শর্ত হলো হারাম কিছু প্রার্থনা না করা।
- কিয়ামতের দিন: সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, কিয়ামত এই দিনেই সংঘটিত হবে।
জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল
জুমার দিনে কিছু বিশেষ আমল রয়েছে যেগুলি সাওয়াব অর্জনে সহায়ক:
জুমার নামাজ: হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, "এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান মধ্যবর্তী সময়ের পাপ মোচন করে, যদি ওই ব্যক্তি কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।" (মুসলিম হাদিস ২৩৩)
গোসল করা: জুমার দিনে গোসল করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসুল সা. বলেন, "যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো এবং তেল ব্যবহার করল, তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।" (বোখারি, হাদিস ৮৮৩)
মসজিদে সবার আগে যাওয়া: জুমার দিন মসজিদে আগে যাওয়া সওয়াবের কাজ। রাসুল সা. বলেন, "যে ব্যক্তি প্রথমে মসজিদে প্রবেশ করবে, তার সওয়াব অনেক বেশি।" (বোখারি, হাদিস ৮৪১)
সুরা কাহাফ পাঠ: জুমার দিনে সুরা কাহাফ পাঠ করা বিশেষ ফজিলত সম্পন্ন। রাসুল সা. বলেছেন, "যে ব্যক্তি সুরা কাহাফ পড়বে, তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় আলোকিত থাকবে।" (তারগিব ১৪৭৩)
বিশেষ মুহূর্তে দোয়া কবুল হয়
জুমার দিনের একটি বিশেষ সময় আছে, যখন আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া কবুল করেন। হজরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত, "যে ব্যক্তি জুমার দিন আল্লাহর কাছে দোয়া করবে, আল্লাহ তাকে তা দেবেন।" (আবু দাউদ ১০৪৮) বিশেষ করে আছরের পরের সময়টিতে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মহিলাদের জন্য জুমার আমল
জুমার দিনের ফজিলত পুরুষ ও মহিলাদের জন্য সমান। মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক নয়, তবে তারা সেগুলির মাধ্যমে সাওয়াব লাভ করতে পারেন: গোসল করা, দরুদ পাঠ করা, সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা এবং অন্যান্য ছোট ছোট আমল।
উপসংহার
জুমার দিন মুসলিমদের জন্য আল্লাহর অশেষ রহমত লাভের একটি সুযোগ। এ দিনের বিশেষ আমলগুলো অনুসরণ করে আমরা আমাদের জীবনকে আরও সুন্দর ও পবিত্র করতে পারি। জুমার দিনের মর্যাদা ও ফজিলত আমাদের সকলের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার বিষয়।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!