জুমার দিনকে মুসলিমরা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। পবিত্র কুরআনে এই দিনের প্রতি গুরুত্ব বোঝাতে আল্লাহ তায়ালা ‘জুমা’ নামে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাজিল করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার একটি মুহূর্ত থাকে। কোনো মুসলিম যদি সেই সময় পায় এবং নামাজে থাকে, তবে তার কল্যাণ কামনা আল্লাহ পূরণ করেন।” (বুখারি: ৬৪০০)
জুমার দিনকে গরিবের ঈদের দিন বলা হয়
মুসলিমদের কাছে জুমার দিন সাপ্তাহিক ঈদের মতো। এ দিন দান-সদকা, মসজিদে উপস্থিতি এবং বিশেষ আমলকে ঘিরে সওয়াবের একটি বিশেষ বার্তা বহন করে। ইসলামের দৃষ্টিতে জুমার দিন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতোই মর্যাদাপূর্ণ। তাই অনেকেই জুমাকে “গরিবের ঈদের দিন” বলে অভিহিত করে থাকেন।
জুমার নামাজ: সপ্তাহের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ নামাজ
জুমার দিন সবার আগে মসজিদে উপস্থিত হওয়ায় বিশেষ সওয়াবের কথা উল্লেখ করেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি প্রথমে মসজিদে আসে, সে এমন সওয়াব পায় যেন সে একটি উট সদকা করল। এরপর পর্যায়ক্রমে গাভী, মুরগি ও ডিম সদকার সওয়াবের সাথে তুলনা করা হয়েছে।” (বুখারি: ৮৮২)
জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা ফরজ। জুমার নামাজে দুই রাকাত ফরজ, এর আগে চার রাকাত কাবলাল জুমা ও পরে চার রাকাত বাদাল জুমা (সুন্নত) পড়ার বিধান রয়েছে।
জুমার বিশেষ আমল
রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দিনে বিশেষ কিছু আমল করার পরামর্শ দিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- গোসল করা
- উত্তম পোশাক পরা
- সুগন্ধি ব্যবহার করা
- আগেভাগে মসজিদে যাওয়া
- সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা
- রাসুল (সা.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা
- খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং খুতবার সময় নীরব থাকা
- বিশেষ মুহূর্তে দোয়া করা
দোয়া কবুলের বিশেষ সময়
হাদিস অনুযায়ী, জুমার দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যখন দোয়া কবুল হয়। অধিকাংশ ওলামার মতে, আসরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই সময়টিকে দোয়া কবুলের সম্ভাব্য সময় বলে গণ্য করা হয়।
সূরা কাহফ তিলাওয়াতের ফজিলত
হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ তিলাওয়াত করবে, তার জন্য এক জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত নূর হবে। (তিরমিজি)
জুমার দিন: ইতিহাস ও তাৎপর্য
জুমার দিনে ইসলামী ইতিহাসে বড় বড় ঘটনা ঘটেছে। হাদিসে এসেছে, এই দিনেই হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়, জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। (মুসলিম শরিফ: ৮৫৪)
উপসংহার
জুমার দিন শুধু নামাজ নয়; বরং এটি আত্মিক উন্নতির এক বিশেষ সুযোগ। এ দিন আমল করা ও দোয়া করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিস অনুযায়ী, আমাদের উচিত জুমার দিনকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দেওয়া এবং এর প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগানো।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!