মানুষের অন্তর তার জীবনের মূল চালিকাশক্তি। এটি শুধুমাত্র শরীরের একটি অঙ্গ নয়, বরং বিশ্বাস, ইচ্ছা এবং নৈতিকতার আসন। অন্তরের সুস্থতা আমাদের জীবনের গুণগত মান নির্ধারণ করে। ইসলামি শিক্ষা অনুযায়ী, অন্তরের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে অন্তরের রোগ ও তার প্রতিকারের স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ তোমাদের চেহারা ও দেহ নয়; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও কাজ দেখেন।” (মুসলিম, হাদিস: ২৫৬৪)
তিনি আরও বলেছেন, “দেহে এমন একটি অঙ্গ রয়েছে, যা ভালো থাকলে গোটা দেহ ভালো থাকে। আর তা খারাপ হলে গোটা দেহ খারাপ হয়ে যায়। সেটি হলো অন্তর।” (বুখারি, হাদিস: ৫২)
তবে অন্তরের সুস্থতা হারানোর কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে, যা আমাদের নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। চলুন, এই কারণগুলো জেনে নেই:
১. আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীনতা
যে অন্তর আল্লাহর স্মরণে ব্যস্ত থাকে না, তা ধীরে ধীরে কঠোর হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,
“যে আমার উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন সংকটময় হবে।” (সুরা তহা, আয়াত: ১২৪)
২. পাপ কাজের আধিক্য
পাপ কাজ অন্তরে কালো দাগ ফেলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“বান্দা যখন পাপ করে, তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। বারবার পাপ করলে এই দাগ পুরো অন্তর ঢেকে দেয়।” (তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৩৪)
৩. দুনিয়ার প্রতি আসক্তি
দুনিয়ার প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা অন্তরকে দুর্বল করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“ইমান এদিকে (ইয়েমেনের দিকে)। কঠোরতা ও অন্তরের কাঠিন্য তাদের মধ্যে যারা সব সময় দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে।” (বুখারি, হাদিস: ৩৩০২)
৪. অসৎ সঙ্গ
অসৎ সঙ্গ অন্তরে গিবত, সমালোচনা এবং অহেতুক কথার প্রভাব ফেলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হলো আতর বিক্রেতা ও কর্মকারের হাপর।” (বুখারি, হাদিস: ২১০১)
৫. গান-বাজনা শোনা
গান-বাজনা অন্তরকে দুর্বল করে। আল্লাহ বলেন,
“কেউ কেউ বেহুদা কথা ক্রয় করে, যাতে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে।” (সুরা লোকমান, আয়াত: ৬)
৬. উপদেশে প্রভাবিত না হওয়া
মৃত অন্তর আল্লাহর আয়াত ও উপদেশ শুনে ভীত হয় না। আল্লাহ বলেন,
“যখন মুমিনদের কাছে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, তখন তাদের অন্তর ভীত হয়। আর যখন তাদের সামনে আয়াত পড়া হয়, তাদের ইমান বেড়ে যায়।” (সুরা আনফাল, আয়াত: ২)
কীভাবে অন্তরকে সুস্থ রাখবেন?
অন্তরের সুস্থতা বজায় রাখতে আল্লাহর স্মরণে মনোযোগী হওয়া, পাপ থেকে দূরে থাকা, সৎ সঙ্গীদের সাথে সময় কাটানো এবং কোরআন-হাদিসের চর্চা করা অত্যন্ত জরুরি।
আল্লাহ আমাদের অন্তরকে পবিত্র ও জীবন্ত রাখুন। আমিন!
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!