সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেফ এক্সিট দেওয়া নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। তাকে দেশে রেখে বিচার করা উচিত ছিল নাকি নিরাপদে চলে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া ঠিক হয়েছে—এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে। এবার সেই বিতর্কের অবসান ঘটালেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান।
সম্প্রতি কানাডাভিত্তিক বাংলা গণমাধ্যম নাগরিক টেলিভিশনের সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান বলেন, "আমি যখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছিলাম, তখন জানতে পারি শেখ হাসিনা চলে যাচ্ছেন। তবে তিনি যে দেশ ছাড়ছেন, সেটা জানা ছিল না। আমি মনে করি, দেশে থাকলে তার জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারত। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কেউই চায় না। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।"
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছে দেশ
সেনাপ্রধান আরও বলেন, "সকল রাজনৈতিক শক্তি একসঙ্গে কাজ করলে দেশ সংস্কারের পথে এগিয়ে যাবে। আমাদের লক্ষ্য গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনা, এবং এই লক্ষ্য থেকে আমরা পিছু হটব না। সেনাবাহিনীও সরকারকে সহায়তা করছে। এ ধরনের পরিবর্তন মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।"
গুজব ও বিভ্রান্তি নিয়ে সতর্কতা
সেনাপ্রধান জনগণের উদ্দেশে বলেন, "অনেক গুজব ছড়ানো হচ্ছে। কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম সত্যের সাথে মিথ্যাকে মিশিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এতে জনগণের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে, যা মোটেও কাম্য নয়। দায়িত্বশীল সংবাদমাধ্যমগুলো সঠিক তথ্য প্রচার করছে, তবে মিডিয়ার আরও সময় প্রয়োজন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য।"
সমস্যা সমাধানে সময় লাগবে
ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, "১৬ বছরের সমস্যা ১৬ দিনে মিটবে না। এমনকি ১৬ মাসেও হয়তো পুরোপুরি সমাধান হবে না। প্রশাসন, আমলাতন্ত্র, পুলিশ—সব জায়গায় সমস্যা রয়েছে। সরকার কাজ করছে, তাদের সময় দেওয়া উচিত। অধৈর্য হলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ব্যাহত হবে।"
সরকারি কর্মকর্তাদের ভূমিকা ও ব্যবস্থা গ্রহণ
আগের সরকারের সমর্থনে থাকা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "সরকারি কর্মচারীরা সবসময়ই যে কোনো সরকারের সাথে কাজ করেন। এর মানে এই নয় যে তারা আগের শাসনের পক্ষে ছিলেন। তবে যারা প্রকৃত অপরাধী, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" তিনি আরও জানান, সেনাবাহিনীর অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে এবং দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেনাবাহিনীর ব্যারাকে ফেরা প্রসঙ্গে
সেনাবাহিনী কেন এখনো ব্যারাকে ফিরে যাচ্ছে না—এমন প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, "আমরা যত দ্রুত সম্ভব ব্যারাকে ফিরতে চাই। কিন্তু পুলিশ এখনো পুরোপুরি দায়িত্ব নেওয়ার অবস্থায় পৌঁছেনি। পুলিশ বাহিনী প্রায় ভেঙে পড়েছিল, তাদের পুনর্গঠনের জন্য সময় প্রয়োজন। তারা দায়িত্ব নেয়ার মতো সক্ষম হলেই আমরা ব্যারাকে ফিরে যাব।"
অস্থিরতা দমনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা
সাম্প্রতিক আন্দোলন-সংকট মোকাবিলার বিষয়ে তিনি বলেন, "সেনাবাহিনী বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। আনসারদের বিষয়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মানুষের কষ্ট আমরা বুঝি, তবে সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। সবকিছুই সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যাবে।"
সেনাপ্রধানের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ও সেনাবাহিনী একযোগে কাজ করছে এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন আনতে তারা বদ্ধপরিকর। তবে এ যাত্রায় জনগণের ধৈর্য ও সহায়তা প্রয়োজন।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!