দুর্ঘটনার পরপরই প্রশাসন সরব হয়, তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং দায়ীদের খুঁজে বের করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই পদক্ষেপগুলো কেন আগেই নেওয়া যায় না? কেন আমরা প্রতিবার প্রাণহানি হওয়ার পরই নড়েচড়ে বসি?
স্কুল জীবনের একটি বহুল প্রচলিত ইংরেজি অনুবাদ ছিল— "রোগী মারা যাওয়ার পর ডাক্তার আসিল।" বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই লাইনটির বাস্তবতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। প্রতিটি দুর্ঘটনা যেন আমাদের নতুন করে মনে করিয়ে দেয়, আমরা কেবল প্রতিক্রিয়া দিতেই অভ্যস্ত, প্রতিরোধ করতে নয়।
পুরান ঢাকার ট্র্যাজেডি থেকে শুরু
২০১০ সালের নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জন মারা গিয়েছিল। ২০১৯ সালের চকবাজারের চুড়িহাট্টায় আগুনে ৭১ জনের প্রাণহানি ঘটে। তবুও পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গোডাউনগুলো এখনো দাউ দাউ করে ঝুঁকির বীজ বপন করছে। দুর্ঘটনার পর হঠাৎ অভিযান চালানো হয়, তালিকা তৈরি হয়, কিন্তু কিছুদিন পর আবার সব স্তব্ধ হয়ে যায়।
বনানী এফআর টাওয়ার ও ইউনাইটেড হাসপাতাল
২০১৯ সালের এফআর টাওয়ারের আগুনে ২৬ জন নিহত হন। তদন্তে বের হয় নকশা জালিয়াতি, দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ২০২০ সালের ইউনাইটেড হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারায় ৫ রোগী। প্রতিবারই তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে ‘অবহেলা’, কিন্তু কার্যকর পরিবর্তন কই?
মগবাজার, বঙ্গবাজার থেকে বেইলি রোড পর্যন্ত
২০২১ সালে মগবাজারের বিস্ফোরণ, ২০২৩ সালের বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এবং ২০২৪ সালের বেইলি রোডের রেস্তোরাঁ ট্র্যাজেডি— প্রতিটি দুর্ঘটনাই শহর পরিকল্পনার ভয়াবহ ব্যর্থতার প্রমাণ। নিয়মকানুন থাকলেও সেগুলোর প্রয়োগ নেই। অনুমোদন ছাড়াই ভবন সম্প্রসারণ, অগ্নিনিরাপত্তার অভাব আর প্রশাসনিক গাফিলতি যেন দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
সর্বশেষ মাইলস্টোন স্কুলের দুর্ঘটনা
সম্প্রতি উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ঘটনায় প্রাণহানি সংখ্যা ২৭-এ দাঁড়িয়েছে। আহতদের চিকিৎসা চলছে। তদন্ত হবে, ক্ষতিপূরণ ঘোষণা হবে, কিন্তু হারানো জীবনের ক্ষতিপূরণ কি সম্ভব?
সমাধান কোথায়?
ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ ও অগ্নিনির্বাপন আইনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক হলেও বেশিরভাগ ভবন তা মানছে না। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর শুধু দায়ী খোঁজা হয়, কিন্তু প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।
পরিকল্পিত নগরায়ণ এবং বিধিমালা বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।
রাজউক ও ফায়ার সার্ভিসের সক্রিয়তা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে।
জনসচেতনতা ও অগ্নিনির্বাপন প্রশিক্ষণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
দুর্ঘটনার পর কাঁদার পরিবর্তে আগে থেকেই প্রতিরোধই পারে এই মৃত্যুর মিছিল থামাতে।
মন্তব্য করার জন্য লগইন করুন!